কাচা রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন।(10 টি উপকারিতা)
কাঁচা রসুনের উপকারিতা: বর্তমান সময়ের কিছু গবেষণা বলছে যে রসুনের বাস্তবধর্মী অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন সাধারণ সর্দি-কাশি কিংবা জ্বর সারাতে এবং শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে রসুন অনেক কার্যকরী একটি ঔষধ
আসসালামু আলাইকুম। আজকের এই প্রতিবেদনে আমি কাঁচা রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দেবো।
এই প্রতিবেদন এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কাচা রসুনের উপকারিতা কি? রসুন খেলে কি হয় ?রসুন কোন কোন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে? রসুন খাওয়ার পদ্ধতি ?রসুন কোন কোন রোগে কার্যকরী ?রসুন খাওয়ার কোন অপকারিতা আছে কিনা? ইত্যাদি।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনি যা যা জানতে পারবেন?
- রসুন কোন ধরনের খাদ্য
- রসুনে কোন ধরনের উপাদান থাকে
- রসুন খাওয়ার উপকারিতা
- রসুন কোন কোন রোগের কার্যকরী ঔষধ হিসেবে কাজ করে
- রসুনের অপকারিতা
“খাদ্যকে ওষুধ হতে দাও, ওষুধকে খাদ্য হতে দাও“-এই বিখ্যাত শব্দগুলো বলেছিলেন বিখ্যাত গ্রিক ফিজিশিয়ান হিপোক্রেটস । হিপোক্রেটসকে পশ্চিমা ঔষধ এর জনক বললে অনেকেই হয়তো চিনবেন। তাকে মাঝে মাঝে পশ্চিমা ঔষধের জনক হিসেবেই অভিহিত করা হয়।
তিনি রসুনকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন। বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান তার সেই পরামর্শের ভিত্তি এবং যথার্থতা খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন।
রসুন কি ? রসুন কোন ধরনের খাদ্য ?
রসুন এক ধরনের মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটি Allium গণের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ ,যার সাথে মিল আছে পেঁয়াজ জাতীয় উদ্ভিদ গুলোর সাথে।
একটি রসুন অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ দিয়ে গঠিত যেগুলোকে কোয়া বলে। একটি রসুন এ সর্বোচ্চ 10 থেকে 20 টি কোয়া থাকতে পারে।
রসুন বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই চাষ করা হয়। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলো যথা বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান সহ ভারতীয় উপমহাদেশের যে কয়েকটি দেশ আছে এগুলো সহ রাশিয়া চীন পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে রসুন চাষ সর্বাধিক হারে হয়।
এক গবেষণা বলছে যে, একদিন মানুষ গড়ে প্রতিবছর দুই পাউন্ড করে রসুন খায়।
রসুন মানুষ খাবার এবং ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে। এর কারণ হিসেবে বলা যায় এর শক্তিশালী ঝাঁঝালো গন্ধ এবং খাবারের স্বাদ বাড়ানোর কাজের জন্য।
ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ব্যাবিলনীয় ,মিশরীয়, রোম্যান গ্রীক এবং চীনা সভ্যতায় ও এই রসুন ব্যবহার করা হতো। তবে তখনো পর্যন্ত তারা আর ওষুধকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করেনি, তখন তারা রসুনকে কেবলমাত্র কার্যকরী এবং অতি প্রিয়জনীয় ঔষধ হিসেবে মনে করত
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে, যে রসুনের এত সব কার্যকরী গুণাবলী থাকার পেছনে যে পদার্থটি কাজ করেছে সেটি হচ্ছে রসুনের মধ্যে থাকা সালফার কম্পাউন্ডস । রসুনকে যখন কাটা হয় কিংবা ছোলা হয় তখন এর থেকে ঝাঁঝালো গন্ধ বের হয়ে আসে, এটি মূলত সালফার কম্পাউন্ডস।
এছাড়াও রসুনের মধ্যে আরও কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো রসুনের এতসব কার্যকরী গুণাবলীর পেছনে কাজ করে। সেগুলো হলো: diallyl disulfide ও s-allyl cysteine
যখন আমরা রসুনের মধ্যে বিদ্যমান সালফার কম্পাউন্ডস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তখন এটি আমাদের রক্তে মিশে সারা শরীরে ভ্রমণ করে এবং আমাদের শরীরে শক্তিশালী জৈবিক প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
আরো পড়ুন,
- রক্ত কি | রক্তের গ্রুপ | কোন রক্তের গ্রুপ সবচেয়ে ভালো
- ক্ষারক কাকে বলে।ক্ষার ও ক্ষারকের মধ্যে পার্থক্য|ক্ষারকের বৈশিষ্ট্য
- ক্ষারক কাকে বলে।ক্ষার ও ক্ষারকের মধ্যে পার্থক্য|ক্ষারকের বৈশিষ্ট্য
রসুনের মধ্যে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান।
উল্লেখ জনক ভাবে রসুনের মধ্যে বিদ্যমান ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম, তবে এটি অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টি উপাদান বহন করে।
প্রতি ৩ গ্রাম রসুনের (১ টি কোয়া) মধ্যে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ম্যাঙ্গানিজ : ২ শতাংশ প্রায়।
- ভিটামিন C : ২ শতাংশ প্রায়।
- ভিটামিন B6 :১ শতাংশ প্রায়।
- Selenium : ১ শতাংশ প্রায়।
- Fiber : ০.০৬ গ্রাম প্রায়।
সামগ্রিকভাবে হিসাব করলে প্রতি তিন গ্রাম রসুনের মধ্যে ৪.৫ ক্যালোরি , ০.২ গ্রাম প্রোটিন এবং ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।
রসুনের মধ্যে ক্যালরি কম পাওয়া গেলেও এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায়।
রসুন কেন এত উপকারী ?
আগে, রসুনের এত কার্যকরী গুণাবলী থাকার কারণ এবং এর ব্যাখ্যা কোনটাই স্পষ্ট ছিল না। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নত হওয়ার ফলে এখন আমরা জানতে পেরেছি যে , রসুনের মধ্যে বিদ্যমান সালফার জাতীয় উপাদান গুলোই মূলত রসুনের এত কার্যকরী গুণাবলীর পেছনে প্রভাব সৃষ্টি করে।
আমরা যখন রসুন কাটি ছোলাই কিংবা ভর্তা করি তখন এর মধ্যে বিদ্যমান সালফার জাতীয় উপাদান allicin (অ্যালিসিন) এ পরিবর্তিত হয়ে যায়।
অ্যালিসিন একটি চমৎকার উপাদান, এটিই মূলত রসুনের যাদুকরী সব গুনাবলী নিয়ন্ত্রন করে।
যাহোক সূত্রের মাধ্যমে আমরা তো জানলাম যে রসুনের মধ্যে কি কি থাকে এবং রসুনের উপকারিতা কি?
তবে বাস্তব জীবনে রসুনের প্রয়োগ এবং উপকার আসলে কতটুকু সেটি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।।
পড়তেই থাকুন, কাঁচা রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা।
রসুনের উপকারিতা সমূহ।
রসুনের উপকারিতা: রসুনের বাস্তবধর্মী অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর অপকারিতা খুব একটা নেই। নিচে রসুনের উপকারিতা সমূহ কলাম আকারে উল্লেখ করা হলো।
শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় রসুন।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যা মানুষকে বিভিন্ন জীবন থেকে রক্ষা করে। শরীরে কোন জীবনও প্রবেশ করলে ,প্রথমে শরীরে বিদ্যমান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমমিউন সিস্টেম জীবাণুকে ধ্বংস করে।
রসুন এ বিদ্যমান উপাদান গুলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অংশে বৃদ্ধি করে দেয়। অর্থাৎ রসুন খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষের সর্দি কাশি জ্বর কিংবা ফ্লু ভাইরাস এর মত রোগগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
উপকার পাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে প্রতিদিন দুটো করে কাটা রসুন খাওয়া(তবে পরামর্শ দেওয়া হয় প্রতিদিন চারটি করে কোয়া )। এছাড়া শিশুদের সর্দি-কাশি বেশি বৃদ্ধি পেলে রসুন সরিষার তেল ও লবণ একটি চামচে নিয়ে সেটি গরম করে শিশুদের নাকে, বুকে এবং অন্যান্য স্থানে লাগানো হয়।
রসুন শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
কিছু Cardiovascular disease যেমন, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক, এই রোগ গুলো মৃত্যুর জন্য অন্যান্য যে কোন রোগের তুলনায় বেশি দায়ী।
High blood pressure বা hypertension সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ কারণ গুলোর মধ্যে একটি, যা এসব রোগকে বাড়িয়ে দেয়।
আরো কিছু গবেষণা বলছে, প্রায় ৭০% হার্ট অ্যাটাক , স্ট্রোক এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুখ গুলো হয় এই উচ্চ রক্তচাপের জন্য।
আরো এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে বিশ্বের প্রায় ১৩.৫% মৃত্যুর কারণ হচ্ছে এই উচ্চ রক্তচাপ। তাই আমাদের অকাল মৃত্যু ঠেকাতে এই উচ্চ রক্তচাপের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
রসুন একটি দারুন মসলা জাতীয় খাবার এবং একটি ঔষধ যা মানুষের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনে।
রসুনকে যদি আপনি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে।
যদি আপনি রসুন পছন্দ না করেন, তবুও আপনি এটিকে আপনার ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত করে রাখতে পারেন, কারন এটি গ্রহণের মাধ্যমে আপনি আপনার রক্তচাপকে কমিয়ে আনতে পারবেন , সর্দি ,কাশি, জ্বর ইত্যাদি কমাতে পারবেন তথা অনেকগুলো উপকার পেতে পারবেন।
যদি আপনি নিয়মিত সংক্ষেপে চান তাহলে এর নির্দিষ্ট একটি মাত্রা মেনে চলতে হবে (প্রতিদিন চারটি করে কোয়া)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি কোন অসুখে ভোগেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কোন কিছু গ্রহণ করবেন।
আরো পড়ুন,
- ২৬ মার্চ কি দিবস এবং কেনো?
- ১ টন কত কেজি |এক টন সমান কত কেজি ?
- নতুন গেমস ডাউনলোড করুন|২০+ নতুন নতুন গেম ডাউনলোড করুন
- ২৬ মার্চ কি দিবস এবং কেনো?
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা, সাথে পিডিএফ (পরীক্ষা ও রচনা প্রতিযোগিতার জন্য)
সেক্সে রসুনের উপকারিতা।
সেক্সের রসুনের উপকারিতা: ইরেস্টাইল ডিসফাংশন (ED) এটিকে বাংলায় পুরুষত্বহীনতা বলে। এ রোগটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোন ব্যক্তির যদি একাধারে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে এবং ব্রেন স্ট্রোক হয় কিংবা পারকিনসন ডিজিজ ও মাল্টি পল ক্লোরোসিস ইত্যাদি হয় তাহলে তার ইরেস্টাইল ডিসফাংশন রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
আমরা জানি রসুনের মধ্যে রয়েছে Allicin ও বিশেষ ধরনের সালফার কম্পাউন্ডস যা উপরোক্ত সমস্যাগুলোকে নিরাময় করে।
Albama University of Birmingham এর গবেষক দলের মতে, রসুনের মধ্যে বিদ্যমান পলি সালফাইড যৌগ (H2S) , মানুষের শরীরের রক্তচাপ কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
Proceedings of the national academy of science journal এর গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে, রসুন মানুষের রক্তনালীগুলোকে শিথিল করার পাশাপাশি মানুষের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি কে ত্বরান্বিত করে ,যা পরোক্ষভাবে মানুষের পুরুষত্বহীনতা কমায়।
উপরন্ত, রসুনের মধ্যে রয়েছে Allicin, এটি একটি বায়ো একটিভ যৌগ, যা মানুষের শরীরের রক্ত সঞ্চালন এর গতি বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়া দ্রুত বীর্যপাত আরো একটি সমস্যা, আপনারা এ সমস্যার জন্য রসুন খেতে পারেন।
পড়তেই থাকুন ,কাঁচা রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা।
রসুন শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
কোলেস্টেরল রক্তের একটি চর্বিযুক্ত উপাদান। আমাদের শরীরের রক্তে দুই ধরনের কোলেস্টেরল বিদ্যমান। একটি ভালো কোলেস্টেরল(HDL) অন্যটি খারাপ কোলেস্টেরল(LDL)।
আমাদের শরীরে যদি অনেক বেশি খারাপ cholesterol (LDL) থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) না থাকে তাহলে আমরা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা পতিত হবে।
রসুন আমাদের শরীরের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ খারাপ কোলেস্টেরল (HDL) এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই আমাদের জন্য রসূল অনেক উপকারী
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল রসুন আমাদের ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) উপর কোন প্রভাব ফেলে না। তবুও এটি আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের সংখ্যা কমায় ,তাই এটি আমাদের জন্য উপকারী
উচ্চ ট্রাই গ্লিসারাইড মাত্রা আমাদের হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়, কিন্তু এখানেও রসুন কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না।
যদি আপনার হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থেকে থাকে তাহলে আপনার প্রতিদিনের খাবারে রসুন অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। (যেহেতু এটি খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমায়)।
রসুন কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
স্বাস্থ্যের জন্য রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা সম্ভব। স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য রসুন গ্রহণ করলে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে।
গবেষণা অনুসারে , কাঁচা রসুন খাওয়া কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি তোমাদের সাহায্য করে।
Iowa Women’s Health Study এর গবেষণা অনুসারে, যেসব মহিলা শাকসবজি, ফল এবং অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি রসুন গ্রহণ করে তাদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ কম। তবে এ বিষয়ে আরো গবেষণার দরকার আছে।
রসুনের মধ্যে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
আমরা আগেই জেনেছি রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যালিসিন(Allicin)। এলিসিন হলো একটি বায়ো একটিভ এন্টিবায়োটিক যা বিভিন্ন সংক্রমণ এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে
রসুনের মধ্যে বিদ্যমান উপাদান গুলো নিম্নত্ত সংক্রমণ এবং ব্যাকটেরিয়া গুলোকে দমন করে:
- ছত্রাক
- প্রোটোজোয়া
- ছোঁয়াচে সংক্রমণ
- বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া। যেমন, Salmonella
অ্যালিসিনকে একটি কার্যকরী এন্টিবায়োটিক হিসেবে ধরা হয়। এরূপ মনে করা হয় যে ভবিষ্যতে অ্যালিসিন দ্বারা বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিস্থাপন করা হবে। তবে বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক এর সাথে এটি একত্রে ব্যবহার করা হয়।
পড়তেই থাকুন, কাঁচা রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা।
রসুন ডাইমেনশিয়া(dimensia) রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ডাইমিন শিয়া মানুষের মস্তিষ্কে এমন একটি রোগ যা দ্বারা মানুষ একবার আক্রান্ত হলে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। বয়স্করা এ রোগের বেশি আক্রান্ত হয়, তবে মাঝে মাঝে তরুণরাও এ রোগে আক্রান্ত হয়। উল্লেখ্য যে বয়স বাড়ার সাথে এ রোগের কোন সম্পর্ক নেই।
এ রোগের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে কোন কিছু মনে রাখতে না পারা, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, অসামঞ্জস্য কোন কিছুকে ভালো মনে করে সেটি সম্পন্ন করা, সহজে মুখস্ত করতে না পারা ইত্যাদি।
আমাদের শরীরে কিছু সমস্যা থাকলে এই রোগটি হয়। নিচে এসব উল্লেখ করা হলো:
- যাদের ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে
- যাদের ডায়াবেটিস আছে
- যাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ আছে
- যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি
- এবং যাদের জীবনে বিষন্নতা বেশি।
আমরা জানি, রসুনের মধ্যে বিদ্যমান সালফার কম্পাউন্ডস আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ ,কোলেস্টেরল এর মাত্রা ,ব্রেন স্ট্রোক ,হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি প্রতিরোধে কাজ করে।
তাই রসুন খেলে ডাইম্যানসিয়া রোগ প্রতিরোধে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। তবে এটা গ্যারান্টি দেওয়া যায় না যে রসুন খেলে আপনার এই রোগ প্রতিকার হবে। রসুন খাওয়ার মাধ্যমে আপনি এটি কিছুটা পরিমাণে প্রতিরোধ করতে পারবেন।
এছাড়াও রসূলে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ডাইম্যানসিয়া রোগ প্রতিরোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসুনের মধ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলো মানুষের শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম বাড়ায় এবং সেই সাথে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের oxidative stress কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
তাই Dimensia রোগ প্রতিরোধে রসুন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে রসুনের উপকারিতা অনেক
রসুন শরীরকে শক্তিশালী করে।
রসুনের মধ্যে বিদ্যমান উদ্বোধন হলো মানুষের শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং শারীরিক শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
প্রাচীন ব্রিক অলিম্পিক অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য তাদেরকে রসুন খাওয়ানো হতো। আমরা উপরে ই আলোচনা করেছি রসুন আমাদের শরীরের কি কি খারাপ প্রভাব কমাতে সাহায্য করে:
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
- নিম্ন রক্তচাপ
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- অসুস্থতার দৈর্ঘ্য কমায়।
আমরা যদি এসব রসুনের উপকারিতা হিসেবে পেয়ে থাকে তাহলে আমরা খুব সহজেই ফিট থাকতে পারবো। তাই শরীর ফিট থাকার জন্যেও রসুন খেতে হয়।
পড়তেই থাকুন ,কাঁচা রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা ।
রসুন আমাদের শরীরকে বিষমুক্ত (detoxification) করে।
Detoxification হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ থেকে আমাদের শরীর মুক্ত হয়ে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেইসব পদার্থ আমাদের শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়ে যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো না। এটা আমাদের সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা প্রতিদিনই বিশাল সংখ্যক কেমিক্যাল এবং বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করি যা আমাদের শরীরের জন্য কখনোই ভালো না। এসব বিষাক্ত পদার্থের মাধ্যমে আমাদের চারপাশের পরিবেশ তথা, পানি ,বায়ু ,বাটি ইত্যাদি দূষিত হচ্ছে। নিচে কয়েকটি বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ এবং দূষণ উল্লেখ করা হলো:
- আমরা যেসব কেমিক্যাল কৃষি কাজে বা কৃষি জমিতে ব্যবহার করি।
- নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট থেকে নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন।
- গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র পরিষ্কারের জন্য কেমিক্যাল।
- কেমিক্যাল সম্বলিত অন্যান্য গৃহস্থালির জিনিসপত্র।
রসুন একটি শক্তিশালী বিষমুক্তকরণ খাবার(detox food)। রসুন আমাদের লিভারের এনজাইম দ্বারা glutathione উৎপন্ন করে, এটি আমাদের শরীর থেকে এসব বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশনে সহায়তা করে।
এছাড়াও রসুন বিভিন্ন ধরনের detoxifying components উৎপন্ন করে যার মধ্যে রয়েছে multiple bioactive selenium এবং sulfur compounds ।
মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় কমাতে রসুনের ব্যবহার।
রসুন মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরি বৃদ্ধি করে দেয়, এই ইস্ট্রোজেন হরমোন মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে।
menopausal women এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে রসুনের নির্যাস এর দৈনিক ডোজ (কাঁচা রসুনের ২ গ্রামের সমান) উল্লেখযোগ্যভাবে ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরীর ঘাটতি কমায়।
তবে এ বিষয়ে এখনো পর্যাপ্ত গবেষনা হয়নি, তাই সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না। তবুও রসুন যেহেতু একটি প্রাকৃতিক খাবার তাই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
পড়তেই থাকুন ,কাঁচা রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা।
রসুনের অপকারিতা
রসুনের অপকারিতা: রসুনের উপকারিতা অনেক থাকলেও এর অপকারিতাও রয়েছে। রসুন একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটিকে মানুষ খাবার হিসেবে গ্রহণ করে অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে। প্রত্যেক খাবার কিংবা ঔষধের একটা মাত্রা রয়েছে, যে পর্যন্ত গ্রহণ করলে আমরা সার্বিকভাবে সুস্থ থেকে রসুনের উপকারিতা নিতে পারব।
কিন্তু আমরা যদি রসুনের অধিক মাত্রার ডোজ নিয়ে থাকি তাহলে এটি অবশ্যই আমাদের শরীরে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করবে।
তবুও রসুন যেহেতু কি প্রাকৃতিক খাবার, তাই রসুনের অপকারিতা খুব বেশি নেই। আমরা সহতোই জানি প্রাকৃতিক নির্যাস এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব কম। নিচে এমন কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করলাম যেগুলো অতিরিক্ত রসুন খেলে উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে:
- রসুনের মধ্যে যেহেতু সালফার জাতীয় উপাদান বিদ্যমান তাই এটি খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
- আমরা জানি রসুন খেলে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ কমে যায় এবং নিম্ন রক্তচাপ হওয়ার কারণে এক্ষেত্রেও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, নিম্ন রক্তচাপের কারণে মাথা ঘোরা ,বমি-বমি ভাব, ঘাড় ব্যথায় ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার কারণে এতে বিদ্যমান Allicin আমাদের যকৃতের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রসুন খাওয়া থেকে বারণ করা হয়। কারণ অতিরিক্ত রসুন খেলে দুধের স্বাদ পরিবর্তন হতে পারে এছাড়াও প্রসব বেদনা বাড়তে পারে।
- এছাড়াও অতিরিক্ত রসুন গ্রহণের ফলে আমাদের ডায়রিয়াও হতে পারে।
আরো পড়ুন,
- গেম ডাউনলোড করার অ্যাপস| গেমস ডাউনলোড করার ওয়েবসাইট
- ১০+ ভালো ভালো গেমস | ডাউনলোড করুন একদম ফ্রিতে
- জন্ম নিবন্ধন যাচাই: অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম।
- traffic jam paragraph | 5 best paragraph for traffic jam
আমার শেষ কথা,
আশা করি আপনাদের রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও আমি উল্লেখ করেছি সেক্সে রসুনের উপকারিতা ইত্যাদি। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমি এই প্রতিবেদনের অনেক স্থানে বলেছি বিভিন্ন গবেষণার কথা, আপনাদের যদি এসব গবেষণা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে বা এরূপ প্রশ্ন আসে যে সব গবেষণা কোথাকার তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
উপরোক্ত সবগুলো তথ্য আমি বিভিন্ন ইংরেজির জার্নাল wikipedia সহ বড় বড় অনেক অথেন্টিক ইনফরমেশন সোর্স থেকে সংগ্রহ করেছি।
আজকে এ পর্যন্তই। আসসালামু আলাইকুম।