পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি
পৃথিবীর সব থেকে বড় দেশ কোনটি: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ হচ্ছে রাশিয়া। তবে রাশিয়া হচ্ছে আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ। পরীক্ষার খাতায় যদি প্রশ্ন আসে , পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি? তাহলে এর উত্তর হিসেবে “রাশিয়া” লেখা শ্রেয় হবে।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের সুবিধার্থে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি এ সম্পর্কে জানাতে আজকের এই আর্টিকেলটি বিস্তারিত ভাবে লেখা হয়েছে। আশা করি আপনারা শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
এই কমন প্রশ্নটির উত্তর হয়তো আপনারা সবাই জানেন কিন্তু রাশিয়ার আয়তন কত, রাশিয়ার জনসংখ্যা কত, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা, রাশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে খুব বেশি একটা জানেন না। তাই আমি সাধ্যমত বিভিন্ন রকম তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। তবে আজকের পাঠে শুধুমাত্র রাশিয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি?
পৃথিবীর সব থেকে বড় দেশ কোনটি: আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়দেশ হচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার বর্তমান আয়তন ১৭,০৭৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার কিংবা 17.07 million km² । অথবা আমরা অন্য ভাবে বলতে পারি রাশিয়ার আয়তন হচ্ছে ৬,৫৯২,৮০০ বর্গমাইল কিংবা 6.5 million sq mi.

সংক্ষেপে রাশিয়া সম্পর্কে কিছু কথা: রাশিয়ার অবস্থান হচ্ছে ইউরোপ এবং উত্তর এশিয়ায়। অর্থাৎ রাশিয়ার কিছু অংশ ইউরোপের মধ্যে পড়ে এবং কিছু অংশ উত্তর এশিয়ার মধ্যে পড়ে।
জনসংখ্যার দিক থেকে রাশিয়া বিশ্বের নবম স্থানে অবস্থান করছে। আর আমরা জানি বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। সুতরাং লোক সংখ্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঠিক এক ধাপ পেছনে অবস্থান করছে রাশিয়া।
রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র। কোন কোন ক্ষেত্রে রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক বোমা সংরক্ষিত আছে রাশিয়ার কাছে।
রাশিয়াই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার সাথে অনেক দেশের সীমানা রয়েছে কিন্তু এতগুলো দেশের সাথে সীমানা অন্য কোন দেশের নেই। রাশিয়ার শিবা না বেশিরভাগ ইউরোপের দেশগুলোর সাথে রয়েছে।
রাশিয়া এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্ব পর্যায়ে অবস্থান করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশাল অস্ত্রভান্ডারের বেশিরভাগ পেয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়া তেল সরবরাহ কারী দেশ হিসেবে অর্থনৈতিক বাজারে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। রাশিয়ার অর্থনীতি পৃথিবীর বড় অর্থনীতির দেশগুলোর একটি।
রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম হচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিন। ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়াতে বর্তমানে একনায়ক শাসনতন্ত্র চালু করেছে।
এই ছিল রাশিয়া সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা। এখন আসে বিস্তারিত আলোচনা তে।
পড়তে থাকুন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি?
Read more,
- ১ মিলিয়ন সমান কত টাকা ?
- ২৬ মার্চ কি দিবস এবং কেনো?
- ১ টন কত কেজি |এক টন সমান কত কেজি ?
- মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করার উপায়
রাশিয়ার পতাকা এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদাপূর্ণ চিহ্ন
রাশিয়ার পতাকার তিনটি রং এ তৈরি করা হয়েছে। পতাকার ছবিটি নিম্নরূপ।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পূর্ণ চিহ্ন নিম্নরূপ।
রাশিয়ার ভৌগলিক অবস্থান এবং সীমানা
রাশিয়ার অবস্থান: রাশিয়া পূর্ব ইউরোপে এবং উত্তর এশিয়াতে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম একটি দেশ। আয়তনের দিক থেকে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ হচ্ছে রাশিয়া।
রাশিয়ায় অর্ধ প্রেসিডেনশিয়াল ফেডারেল প্রজাতন্ত্র বিদ্যমান যেখানে সংবিধানের ৮৩ টি ফেডারেল বিষয় দ্বারা সংগঠিত।
রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সীমান্ত রয়েছে যেসব দেশের সাথে তারা যথাক্রমে, নরওয়ে ফিনল্যান্ড লাটভিয়া এস্তোনিয়া লিথুনিয়া , পোল্যান্ড, ইউক্রেন, বেলারুশ আজারবাইজান , কাজাকাস্তান, জর্জিয়া।
এছাড়াও দেশটির সীমান্ত রয়েছে চীন উত্তর কোরিয়া মঙ্গোলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাশিয়ার সীমান্ত রয়েছে বেরিং প্রণালীর আলাস্কা এলাকায়।
এছাড়া রাশিয়ার সীমান্ত রয়েছে জাপানের সাথে। রাশিয়ার অখতস্ক সাগরের সাথে জাপানের সীমান্ত রয়েছে।
পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ এলাকা দখল করে আছে। পৃথিবীর মোট আবাদযোগ্য আয়তনের ৮ ভাগের এক ভাগ রাশিয়া দখল করে আছে অর্থাৎ এক অষ্টমাংশ স্থান।
রাশিয়া এমন একটি দেশ যার মরুভূমি রয়েছে। যদিওবা এই দেশটি শীতপ্রধান দেশ। রাশিয়ায় প্রায় চল্লিশটির ও বেশি ইউনেসকো স্বীকৃত জীবমণ্ডল সারাক্ষণ এলাকা রয়েছে।
রাশিয়ার ১০ মাস(“সেপ্টেম্বর-মে) শৈত্যপ্রবাহ বিদ্যমান থাকে এবং ৮ মাস্ বরফাচ্ছন্ন (অক্টোবর-এপ্রিল) হয়ে থাকে।
বিশেষ করে রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চল বছরের প্রায় পুরোটাই শীতল আবহাওয়া এবং শৈত্যপ্রবাহ চলমান থাকে।
তবে রাশিয়ার পশ্চিম দক্ষিণ অঞ্চলে কিছু মরুভূমি রয়েছে যেখানে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে।
পড়তে থাকুন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি
রাশিয়ার উৎপত্তি।
রাশিয়ার ইতিহাস বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে তৃতীয় থেকে অষ্টম শতাব্দীর দিকে। অষ্টম শতাব্দীর পর্যন্ত রাশিয়ায় বিভিন্ন এলাকায় পূর্ব ইউরোপীয় স্লাভ সম্প্রদায় বসবাস করত। পরবর্তীতে ভারাঞ্জিয়ান যোদ্ধারা এবং তাদের বংশধররা এই রাশিয়া শাসন করেছিল এবং সেখান থেকেই এ দেশটির উত্থান শুরু হয়েছিল।
এরপর ৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়ে যায়। এর ফলে রাশিয়ায় খ্রিস্টান রীতি প্রচলিত শুরু হয়ে যায়।
যেহেতু রাশিয়ায় পরবর্তীকালে পূর্ব ইউরোপের স্লাভ সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করত তাই পরবর্তীতে স্লাভ সম্প্রদায় এর সংস্কৃতি এবং বাইজেন্টাইন সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটেছে যা পরবর্তীতে বহুকাল বিরাজমান ছিল । যার দরুন রাশিয়া অনেক গুলো ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এরপর ইতিহাসের সবচেয়ে দুধর্ষ এবং কুখ্যাত জাতি মঙ্গলরা রাশিয়া দখল করে বসে। এরপর রাশিয়া হয়ে যায় মোঙ্গলদের তথা যাযাবরদের বাসস্থান।
পরবর্তীতে মস্কোর গ্র্যান্ড ডিউক নামক একটি সম্প্রদায় যাযাবর দের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং কিয়েভান রাশিয়ার রাজনীতি এবং সংস্কৃতিকে শাসন করে। এরাই মূলত রুশ জাতি হিসেবে পরিচিত।
এরপরে ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর এরা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং এখন রাশিয়ার ক্ষমতা চলে যায় সমাজতান্ত্রিক দলের হাতে। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক দল রাশিয়ার সবগুলো অঞ্চল একসাথে আবদ্ধ করে গঠিত করে “সোভিয়েত ইউনিয়ন”
বলাবাহুল্য এই রুশদের সাম্রাজ্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তিনটি সাম্রাজ্যের একটি সাম্রাজ্য ছিল।
এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে ভেঙে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গিয়ে সবচেয়ে বড় এবং প্রধান যে দেশটি হয় সেটি হচ্ছে রাশিয়া অর্থাৎ রুশদের স্থান।
উল্লেখ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়ে, রাশিয়া শহর 14 টি দেশের আবির্ভাব ঘটে যেগুলো সাম্রাজ্যের সময় রুশরা শাসন করতো।
রাশিয়ার জনসংখ্যা
২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী রাশিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা হচ্ছে ১৪,৩৯,৭৫,৯২৩ বা এক কথায় বললে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৯ জন।
রাশিয়ান জনসংখ্যার ঘনত্ব হচ্ছে প্রতি 1 বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৯ জন এবং অন্যভাবে বলা যায় রাশিয়ার জনসংখ্যার ঘনত্ব হচ্ছে প্রতি বর্গমাইলে প্রায় ২২ জন।
রাশিয়ার জনসংখ্যা ৮১ শতাংশ রুশ, ৩.৭ শতাংশ তাতার,১.৪ শতাংশ ইউক্রেনি, ১.১ শতাংশ বাশকির , ১.০ শতাংশ চুভাশ , ০.৮ শতাংশ চেচেন, ১১ শতাংশ অন্যান্য / অনির্ধারিত সম্প্রদায়।
পড়তে থাকুন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি।
রাশিয়ার রাজনীতি
রাশিয়ার রাজনীতি মূলত আধা রাষ্ট্রপতি শাসিত দেশ। এখানে রাষ্ট্রপতি সর্বক্ষমতার মালিক এবং রাষ্ট্রপতি নিজেই প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন।
রাশিয়াকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সেখানে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয় যা রাষ্ট্রপতি নিজ হাতে করে থাকেন।
রাশিয়া অর্থনীতি
রাশিয়ার অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর। এ সময়ে রাশিয়াতে পুঁজিবাদী অর্থনীতি গড়ে ওঠে যা রাশিয়ার ভ্রমর অর্থনীতি হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু বর্তমানে রাশিয়াতে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু রয়েছে। রাশিয়ার অর্থনীতির বই বস্তু হচ্ছে তেল-গ্যাস-কয়লা এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ। রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম তেল গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ গুলোর একটি। এর অর্থনীতি এসব খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
রাশিয়ার অর্থনীতি বিষয়ের দশম স্থানে রয়েছে।
বর্তমানে রাশিয়ার মোট জিডিপির হচ্ছে 1.483 trillion
USD (2020) ।
পড়তে থাকুন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি এ সম্পর্কে।
Read more,
- তড়িৎ ঋণাত্নকতা কাকে বলে| তড়িৎ ঋণাত্নকতা কি?(পর্যায়বৃত্ত ধর্ম)
- ক্ষারক কাকে বলে।ক্ষার ও ক্ষারকের মধ্যে পার্থক্য|ক্ষারকের বৈশিষ্ট্য
- class 8 math solution pdf (অষ্টম শ্রেণি গণিত সমাধান পিডিএফ)
- মৌলিক পদার্থ কাকে বলে? মৌলিক পদার্থ কি এবং কত প্রকার?
রাশিয়ার ভাষা
রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় 80% রুশ ভাষায় কথা বলে। এটি রাশিয়ার সরকারি ভাষা।
এছাড়া রাশিয়াতে 80 টিরও বেশি ভাষার প্রচলন রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইউক্রেনিয়ান চেচেন, তাতার ইত্যাদি।
আমাদের শেষ কথা,
আশা করি আপনাদের সামান্য কিছু তথ্য দিতে পেরেছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি এ সম্পর্কে। আশা করি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই পোস্টটি যথেষ্ট হবে।
এ কনটেন্ট সম্পর্কে কোন কথা থাকলে নিজে কমেন্ট করে জানাবেন। আর ভালো লাগলে অবশ্যই লিংকটি কপি করে শেয়ার করে দিবেন। আজকে এ পর্যন্তই। Please visit us with jonmo nibondhon