মৌলিক পদার্থ কাকে বলে? মৌলিক পদার্থ কি এবং কত প্রকার?
আজকের এই পোস্টে আমি মৌলিক পদার্থ কাকে বলে, মৌলিক পদার্থ কি?, মৌল কি? মৌলিক পদার্থ কত প্রকার? এবং যৌগিক পদার্থ কাকে বলে? এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
এছাড়াও এখানে অণু? পরমাণু কি? এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে।
মৌলিক পদার্থ কাকে বলে?
মৌলিক পদার্থ কাকে বলে, বইয়ের ভাষায় বলতে গেলে, যে পদার্থকে ভাঙলে সেই পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না তাকে মৌলিক পদার্থ বলে।যেমনঃ নাইট্রোজেন, ফসফরাস, কার্বন, অক্সিজেন, হিলিয়াম, ক্যালসিয়াম, আর্গন, মিথেন ইত্যাদি।
রসায়নের ভাষায় মৌলিক পদার্থের অপর নাম মৌল।মৌলিক পদার্থকে বুঝতে হলে নিচের অংশটুকুও ভালো করে দেখতে হবে। (সহজ দুটি সংজ্ঞা)
মৌলিক পদার্থকে ভাঙলে কি পাওয়া যায়?
খাঁটি সোনা হচ্ছে মৌলিক পদার্থ। কারণ একে ভাঙলে সোনা ছাড়া আর কিচ্ছু বের হবে না।বাহ্যিকভাবে এটা মনে হতে পারে।
আসলে মৌলিক পদার্থেরও একটা ক্ষুদ্রতম অংশ আছে। মৌলিক পদার্থের রাসায়নিক বিশ্লেষণ ঘটালে আপনি অণু পাবেন।
আবার অণুকে ভাঙলে কতকগুলো পরমাণু পাবেন।আবার পরমাণুকে ভাঙলেও আরো কিছু কণা বের হবে।
এখন পরমাণু এবং অণু থেকে মৌলিক পদার্থকে বর্ণনা করি ।
পরমাণু কি?
পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একককে পরমাণু বলে ।পরমাণুকে ভাঙলে আমরা মূলত তিনটি কণা পাই। সেগুলো হলোঃ ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন।
এছাড়া আরো কিছু কণা থাকে যা পরমাণুকে ভাঙলে পাওয়া যায়।সর্বপ্রথম ১৯১১ সালের বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড পদার্থের এই অংশটির বিশদ ব্যাখ্যা তথা পরমাণুর ব্যখ্যা দেন।

কিন্তু তার ব্যাখ্যাতে অনেক ভুল ছিলো।বলতে পারেন যে তিনি শুধু ফ্রেম আবিষ্কার করেছিলো। অবশ্য ইতোপূর্বে জন ডাল্টন সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানী পরমাণু সম্পর্কে আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
এরপর রাদারফোর্ডের পরমাণুর তত্ত্বটিকে সংশোধিত করে বিজ্ঞানী নিলস বোর ১৯১৩ সালে পুনোরায় পরমাণুর ব্যাখ্যা দেন। এরপর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা বের হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের ছোয়ায় তা কেটে উঠেছে।
অবশ্যই পড়ুন,
অণু কি?
কতকগুলো পরমাণু একত্রিত হয়ে অণু গঠিত হয়।তবে পদার্থের অণুগুলোর একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে এটা ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট কতগুলো পরমাণু নিয়ে গঠিত হতে পারে ।আবার অনন্য কিছু পরমাণু নিয়েও এটি গঠিত হয়।

অণু আবার দুই ধরনের হয়।একটা হচ্ছে মৌলিক পদার্থের অণু বা মৌলের অণু অন্যটি যৌগিক পদার্থের অণু বা যৌগের অণু।
একই ধর্ম বিশিষ্ট একাধিক পরমাণু যুক্ত হয়ে যে অণু গঠিত হয় তাকে মৌলিক পদার্থের অণু বা মৌলের অণু বলে।
যখন একাধিক মৌলের পরমাণু যুক্ত হয়ে অণু গঠিত হয় তখন তাকে যৌগিক পদার্থের অণু বা যৌগের অণু বলে।
একই কণাযুক্ত ও ধর্মবিশিষ্ট কতকগুলো অণু-পরমাণু নিয়ে মৌলিক পদার্থ গঠিত। এটা বুঝানোর জন্য মাত্র।
এবার বুঝলাম যে, মৌলিক পদার্থকে ভাঙলে কিছু অণু পাবো আবার অণুকে ভাঙলে কিছু পরমাণু পাবো।
এবং সেগুলো হবে একই পদার্থের কণাযুক্ত এবং একই ধর্মবিশিষ্ট। তবে সংজ্ঞা হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই সংজ্ঞা একটু দ্বিধাযোগ্য।
মৌলিক পদার্থ কাকে বলে?
একদম শুদ্ধ ভাষায় আমরা বলতে পারি, যে সসব পদার্থকে রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে একাধিক ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ পাওয়া যায় না তাদেরকে মৌলিক পদার্থ বলে।
আবার আমরা একই কথা ভিন্ন ভাবে বলতে পারি। যার কাছে যেটা সহজ লাগে।
যদি প্রশ্নে আসে মৌলিক পদার্থ কাকে বলে? তাহলে আমরা এর উত্তর হিসেবে দিতে পারি যে, যে পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলেও সেই পদার্থ ব্যতীত অন্য কোনো পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না তাকে মৌলিক পদার্থ বলে।
মৌলিক পদার্থ কত প্রকার?
২০১৮ সাল পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ১১৮ টি।এদের মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় প্রায় ৯৮ টি মৌলিক পদার্থ।যেমন বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনি থেকে, ভূ-উপরিস্থ বিভিন্ন যৌগ থেকে ইত্যাদি।
এছাড়াও বাকি ২০ টি মৌল রাসায়নিকভাবে ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন করা হয়।এদের কৃত্রিম মৌল বলে।
জেনে রাখা ভালো, ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন সকল মৌল রেডিও একটিভ বা তেজস্ক্রিও ক্ষমতা সম্পন্ন।
আমাদের প্রায় সবকিছুই কোনো না কোনো পদার্থ দিয়ে গঠিত।আবাক করা তথ্য এই যে মানবদেহ প্রায় ২৬ টি ভিন্ন মৌল নিয়ে গঠিত।
মৌলিক পদার্থগুলোর ধর্ম এবং বিভিন্ন বর্ণনা বুঝতে হলে আপনাকে বুঝতে হবে পর্যায় সারণি সম্পর্কে। যারা ছোট তাদের দরকার না হলেও বড়দের দরকারে পরে এটা।
পর্যায় সারণির একটি নমুনা।
নিচে পারমাণবিক সংখ্যার ক্রমানুসারে 118 টি মৌলিক পদার্থের নাম এবং এর প্রতীক উল্লখ করা হলোঃ
- হাইড্রোজেন (Hydeogen) – H
- হিলিয়াম (Helium) – He
- লিথিয়াম (Lithium) – Li
- বেরিলিয়াম (Beryllium) – Be
- বোরন (Boron) – B
- কার্বন (Carbon) – C
- হাইড্রোজেন (Hydrogen) – H
- অক্সিজেন (Oxygen) – O
- ফ্লোরিন (Fluorine) – F
- নিয়ন (Neon) – Ne
- সোডিয়াম (Sodium) – Na
- ম্যাগনেশিয়াম (Magnesium) – Mg
- অ্যালুমিনিয়াম (Aluminium) – Al
- সিলিকন (Silicon) – Si
- ফসফরাস (Phosphorus) – P
- সালফার (Sulfur) – S
- ক্লোরিন (Cholorine) – Cl
- আর্গন (Argon) – Ar
- পটাশিয়াম (Potassium) – K
- ক্যালসিয়াম (Calcium) – Ca
- স্ক্যানডিয়ায় (Scandium) – Sc
- টাইটানিয়াম (Titanium) – Ti
- ভ্যানাডিয়াম (Vanadium) – V
- ক্রোমিয়াম (Chromium) – Cr
- ম্যাঙ্গানিজ (Manganese) – Mn
- আয়রন (Iron) – Fe
- কোবাল্ট (Cobalt) – Co
- নিকেল (Nickel) -Ni
- কপার (Copper) – Cu
- জিংক (Zinc) – Zn
- গ্যালিয়াম (Gallium) – Ga
- জার্মেনিয়াম (Germenium) – Ge
- আর্সেনিক (Arsenic) – As
- সেলেনিয়াম (Selenium) – Se
- ব্রোমিন (Bromine) – Br
- ক্রিপটন (Krypton) – Kr
- রুবিডিয়াম (Rubidium) – Rb
- স্ট্রোনসিয়াম (Strontium) – Sr
- ইট্রিয়াম (Yttrium) – Y
- জিরকোনিয়াম (Zirconium) – Zr
- নিওবিয়াম (Niobium) – Nb
- মলিবডেনাম (Molybdenum) – Mo
- টেকনেসিয়াম (Technetium) – Tc
- রুথেনিয়াম (Ruthenium) – Ru
- রোডিয়াম (Rhodium) – Rh
- প্যালাডিয়াম (Palladium) – Pd
- সিলভার (Silver) – Ag
- ক্যাডমিয়াম (Cadmium) – Cd
- ইন্ডিয়াম (Indium) – In
- টিন (Tin) – Sn
- এন্টিমনি (Animony) – Sb
- টেলুরিয়াম (Tellurium) – Te
- আয়োডিন (Iodine) – I
- জেনন (Xenon) – Xe
- সিজিয়াম (Caesium) – Cs
- বেরিয়াম(Berium) – Ba
- ল্যান্থানাম(Lanthanum) -La
- সিরিয়াম (Cerium) -Ce
- প্রাসিওডিমিয়াম(Praseodymium)- Pr
- নিওডিমিয়াম(Neodymium) -Nd
Related contents
যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?
যে সব পদার্থকে ভাঙলে দুই বা তার অধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায় তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে।রসায়নের ভাষায় এর অপর নাম “যৌগ”।
এর আগে আমরা জানলাম যে মৌলিক পদার্থকে ভাঙলেও সেই পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে না।
কিন্তু এখন যৌগিক পদার্থের বেলায় জানছি যে যৌগিক পদার্থকে ভাঙলে কিছু মৌলিক পদার্থ বের হয়। আসলেই তাই।
আমাদের প্রকৃতে প্রায় সব ধরনের পদার্থ যৌগ আকারে থাকে। যেমন পানির কথা চিন্তা করো, সেখানে দুইটা হাইড্রোজেন পরমাণু+ একটা অক্সিজেন পরমাণু মিলে একটি পানির অণু তৈরি করছে।
আবার লবণের বেলায়, একটা সোডিয়াম পরমাণু+ একটা ক্লোরিন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটা লবণের অণু তৈরি করছে।আবার অনেক লবণের অণু মিলে একত্রিত হয়ে লবণ নামক একটা পদার্থ তৈরি হচ্ছে।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিচ্ছি যে, যৌগে বিদ্যমান মৌলগুলোর অনুপাত সবসময় সমান থাকে।
উদাহরণ স্বরূপ, পানিকে বিবেচনা করি। পানির অণুতে দু’টা হাইড্রোজেন এবং একটা অক্সিজেন থাকে, তাহলে এর অণুপাত হলো ২:1 । এভাবে সকল যৌগ নির্দিষ্ট অনুপাতে থাকে।
N.B: I recommend you to learn islamic knowledge from this site Upayjano.xyz
আজকে যে শিখলাম,
মৈলিক পদার্থ কাকে বলে? মৌলিক পদার্থ কি? মৌলিক পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? এসব আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে লিখেছি। তবুও যা লিখেছি তা মনে রাখতে পারলে যথেষ্ট।
এছাড়াও আমি বলে দিয়েছি অণু কি? পরমাণু কি? ইত্যাদি। এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করে বলতে পারেন। আজকে এ পর্যন্তই। আসসালামু আলাইকুম।