Skip to content

রক্ত কি | রক্তের গ্রুপ | কোন রক্তের গ্রুপ সবচেয়ে ভালো

রক্ত কি: আসসালামু আলাইকুম। অনেকদিন পর আজকে কন্টেন্ট লিখতে বসলাম। আশা করি ভাল আছেন। স্কুলের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য অনেকদিন ধরে অনলাইনে আসা হয় না, তাই আর্টিকেল ও লিখতে পারিনা।

আমার আজকের এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু খুবই সাধারণ। আপনারা অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন রক্ত কি রক্তের গ্রুপ এবং কোন রক্তের গ্রুপ সবচেয়ে ভালো ইত্যাদি সম্পর্কে। আপনাদের জানানোর স্বার্থে আমি এই কন্টেন্টে রক্ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

এই কনটেন্টের প্রাথমিক তথ্য গুলো নবম দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান বই থেকে সংগ্রহ করা। এবং বাকি যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আমি দিবো সেগুলো ঊইকিপিডিয়া সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েব পোর্টাল থেকে সংগ্রহ করা।

আমার এই আর্টিকেলের যা যা থাকছেঃ

  • রক্ত কি।
  • রক্তের গ্রুপ।
  • রক্তকণিকা কি।
  • বিভিন্ন ধরনের রক্তের রোগ এবং এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার।
  • রক্ত আদান-প্রদান সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনাবলী।
  • রক্তদান কর্মসূচির সুফল
  • রক্ত সম্বন্ধে কিছু সাধারন প্রশ্নাবলী ইত্যাদি।

রক্ত কি

রক্ত কি

রক্ত কি

রক্ত একটি অস্বচ্ছ, মৃদু ক্ষারীয় এবং লবণাক্ত তরল পদার্থ। অন্যভাবে বলতে গেলে রক্ত এক ধরনের ক্ষারীয় ঈষৎ লবণাক্ত এবং লাল বর্ণের যোজক টিস্যু। ধমনী শিরা ও কৈশিকনালি মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রক্ত অভ্যন্তরীণ পরিবহনে অংশ নেয়। অর্থাৎ রক্ত হৃদপিণ্ড শিরা উপশিরা ধমনী এবং পথে আবর্তিত হয়

কিন্তু আমরা যখন পরীক্ষার খাতায় রক্ত কাকে বলে কিংবা রক্ত কি এই নিয়ে সংজ্ঞা লিখব তখন একটু সাজিয়ে গুছিয়ে লিখলে ভালো হবে।

রক্ত কাকে বলে? রক্ত কি এর সংজ্ঞা ? রক্তের সংজ্ঞা?

ক্ষারীয় , ঈষৎ লবণাক্ত এবং লাল বর্ণের তরল যোজক টিস্যুকে রক্ত বলে 

সাধারণ অর্থে রক্ত হচ্ছে একটি তরল উপাদান। আমাদের শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে আঘাতপ্রাপ্ত হলে আপাতদৃষ্টিতে আমাদের শরীর থেকে যে লাল রংয়ের তরল পদার্থ বের হয় সেটিই রক্ত।

রক্ত যে শুধু মানবদেহে থাকে তা ঠিক নয়। রক্ত থাকতে পারে পশুপাখি মাছ কিংবা অন্যান্য প্রাণীর দেহেও ।

যেমন আমরা যখন কোন পশু জবাই করি কিংবা বাজার থেকে বড় মাছ কিনে আনি তখন এর শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়।

এখন প্রশ্ন হতে পারে রক্তের রং লাল হয় কেন?

রক্তের রং লাল হয় এই কারণেই যে রক্তের মধ্যে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ বিদ্যমান যা রক্তের রং লাল করে দেয়। এই রঞ্জক পদার্থটির নাম হিমোগ্লোবিন

রক্তের উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জৈব এবং অজৈব পদার্থ বিভিন্ন ধরনের কলা এবং কয়েকটি প্রোটিন। এছাড়া তোমাকে অনেক কিছু উপাদান রয়েছে সেগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করা হচ্ছে।

আমাদের দেহের ওজনের শতকরা 7 ভাগ রক্ত। সুতরাং সেই হিসেবে আমাদের দেহে রক্তের পরিমাণ 5 থেকে 6 লিটার।

রক্তের উপাদান

আমরা জানি প্রাণিটিস্যু কে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয় । এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক শুকায়ছে তরল যোজক টিস্যু। আরক্ত হচ্ছে এক ধরনের তরল যোজক টিস্যু।

রক্তের অভ্যন্তরস্থ উপাদানগুলোকে মোট দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:

১। রক্ত রস (plasma)

২। রক্ত কণিকা(blood corpuscles)

রক্তরস

রক্ত রস রক্তের তরল অংশ এবং এর রং হালকা হলুদাভাব । সাধারণত রক্তের শতকরা প্রায় 55 ভাগ রক্ত রস। রক্তরসের প্রধান উপাদান পানি। এছাড়া বাকি অংশে প্রোটিন সামান্য অজৈব লবণ এবং বিভিন্ন জৈব যৌগ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।

রক্তরসের প্রায় 91 -92 শতাংশ পানি এবং 8-9 শতাংশ অংশ জৈব ও অজৈব পদার্থ।

জৈব পদার্থ:

রক্ত রসে মাত্র ৭.১%-৮.১% জৈব পদার্থ থাকে। এর মধ্যে অধিক পরিমাণে থাকে প্লাজমা প্রোটিন- গড়ে ৬-৮ গ্রাম/ডেসি লি.। প্লাজমা প্রোটিনগুলো হচ্ছে – অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফিব্রিনোজেন। এছাড়াও অন্যান্য জৈব পদার্থগুলো হল: স্নেহ দ্রব্য ( ফসফোলিপিড, লেসিথিন নিউট্রাল ফ্যাট, কোলেস্টেরল ইত্যাদি), কার্বোহাইড্রেট (গ্লুকোজ), অপ্রোটিন নাইট্রোজেন দ্রব্য (ক্রিয়েটিন, ক্রিয়েটিনিন, জ্যানথিন , অ্যামাইনো এসিড, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড), রঞ্জক দ্রব্য (বিলিরুবিন, বিলিভার্ডিন), বিভিন্ন ধরনের এসিড (যেমন:-ভিটামিন, এনজাইম, মিউসিন ও অ্যান্টিবডি, সাইট্রিক এসিড, ল্যাকটিক এসিড, হরমোন )

আরো পড়ুন,

অজৈব পদার্থ:

রক্তরসে কয়েক ধরনের অজৈব পদার্থ দেখা যায়।এগুলো হল: জল ৯১%-৯২%।

০.৯% গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে আছে কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি।

কঠিন পদার্থ ৭%-৮% যার মধ্যে আছে ক্যাটায়ন ( P+++, Fe++, Cu+, Mn++, Zn++, Pb++, Na+, K+, Ca++, Mg++, ইত্যাদি ) ও অ্যনায়ন (PO43-, SO42-, Cl-, HCO-, ইত্যাদি)

মানব রক্তরসের কিছু প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদানসমূহ:

  • অ্যালবুমিন
  • গ্লোবিউলিন (অ্যান্টিবডি গামা/ইম্যুনো গ্লোব্যুলিন)
  • প্রতঞ্চক ও প্রতিতঞ্চক উপাদান সমূহ
  • কম্প্লিমেন্টস (২০টির বেশি)
  • ফাইব্রিনোজেন ও ভিট্রোনেক্টিন
  • সি আর পি
  • ট্রান্সফেরিন
  • ট্রান্সথাইরেটিন
  • সেরুলোপ্লাজমিন
  • হ্যাপ্টোগ্লোবিন
  • খনিজ লবণ
  • ভিটামিন
  • হরমোন
  • হিমোপেক্সিন
  • সাইটোকাইনস
  • লাইপোপ্রোটিন ও কাইলোমাইক্রন
  • এল বি পি
  • গ্লুকোজ
  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর্বিকণা
  • এন্টিবডি
  • বর্জ্যপদার্থ যেমন :- কার্বন ডাই অক্সাইড , ইউরিয়া , ইউরিক এসিড
  • খুব অল্প পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড

রক্তরসের কাজ

  • অ্যান্টিবডি, কম্প্লিমেন্টস ইত্যাদি প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ উপকরণ রক্ত ধারণ করে।
  • রক্তের ভৌত গুন তরল হওয়ার প্রধান কারণ রক্ত রস।
  • বাফার হিসেবে কাজ করে এতে বিদ্যমান প্রোটিন।
  • দেহের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • দেহে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে।
  • মানবদেহে রক্তরসের মাধ্যমে পচিত খাদ্যবস্তু, হরমোন, উৎসেচক ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।
  • রক্তরসের প্রোটিনের পরিমাণ রক্তের সান্দ্রতা (ঘনত্ব), তারল্য (fluidity), প্রবাহধর্ম (rheology) বজায় রাখে এবং পানির অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

রক্ত কণিকা

রক্ত কণিকা তিন ধরনের , যথা- লোহিত রক্তকণিকা ( Erythrocyte বা Red blood corpuscles বা RBC ) , শ্বেত রক্তকণিকা ( Leukocyte বা white blood corpuscles বা WBC ) এবং অণুচক্রিকা ( Thrombocytes বা Blood platelet ) । লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামে একটি লৌহজাত যৌগ থাকে , যার জন্য রক্ত লাল হয় । হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেন পরিবহন করে । শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণু ধ্বংস করে দেহের প্রকৃতিগত আত্মরক্ষায় অংশ নেয় । মানবদেহে বেশ কয়েক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা থাকে । অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাধায় অংশ নেয়।

উপর তথ্যগুলো শুধু রক্ত কণিকা সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা। আমি রক্ত কণিকা গুলো সম্পর্কে নিচে বিশদভাবে আলোচনা করছি।

লোহিত রক্তকণিকা :

লোহিত রক্তকণিকা|red blood corpuscles

Red blood corpuscles

মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকার মধ্যে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । এটি শ্বাসকার্যে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । লাল অস্থিমজ্জায় লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় । এর গড় আয়ু 120 দিন । মানুষের লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না এবং দেখতে অনেকটা দ্বি – অবতল বৃত্তের মতো । পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে প্রায় 50 লক্ষ ।

এটি শ্বেত রক্তকণিকার চেয়ে প্রায় 500 গুণ বেশি । পুরুষের তুলনায় নারীদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা কম । জীবনের প্রতি মুহূর্তে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয় , আবার সমপরিমাণে তৈরিও হয় । লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন অক্সিহিমোগ্লোবিন হিসেবে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই – অক্সাইড পরিবহন করে ।

হিমোগ্লোবিন : হিমোগ্লোবিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ । লোহিত রক্তকণিকায় এর উপস্থিতির কারণে রক্ত লাল দেখায় । রক্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিন না থাকলে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা ( anemia ) দেখা দেয় । বাংলাদেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী এ রোগে আক্রান্ত ।

 

লোহিত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক অবস্থা জনিত রোগ হচ্ছে থালাসেমিয়া। এটিও বাংলাদেশের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট

শ্বেত রক্তকণিকা|white blood corpuscles

White blood corpuscles

শ্বেতকণিকার নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই । এগুলো হিমোগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ । শ্বেত কণিকার গড় আয়ু ১-১৫ দিন । হিমোগ্লোবিন না থাকার কারণে এদের শ্বেত রক্তকণিকা , ইংরেজিতে White Blood Cell বা WBC বলে । শ্বেত কণিকার সংখ্যা RBC- এর তুলনায় অনেক কম । এরা অ্যামিবার মতো দেহের আকারের পরিবর্তন করে । ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এটি জীবাণুকে ধ্বংস করে । 0.07 . শ্বেত কণিকাগুলো রক্তরসের মধ্য দিয়ে নিজেরাই চলতে পারে । রক্ত জালিকার প্রাচীর ভেদ করে টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে । দেহ বাইরের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে , দ্রুত শ্বেত কণিকার সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে । মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে 4-10 হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে । অসুস্থ মানবদেহে এর সংখ্যা বেড়ে যায় । স্তন্যপায়ীদের রক্তকোষগুলোর মধ্যে শুধু শ্বেত রক্ত কণিকায় DNA থাকে ।

আরো পড়ুন,

প্রকারভেদ : গঠনগতভাবে এবং সাইটোপ্লাজমে দানার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুসারে শ্বেত কণিকাকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায় , যথা ( ক ) অ্যাগ্রানুলোসাইট বা দানাবিহীন এবং ( খ ) গ্রানুলোসাইট বা – দানাযুক্ত ।

 

( ক ) অ্যাগ্রানুলোসাইট : এ ধরনের শ্বেত কণিকার সাইটোপ্লাজম দানাহীন ও স্বচ্ছ । অ্যাগ্রানুলোসাইট শ্বেত কণিকা দুরকমের ; যথা- লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট । দেহের লিম্ফনোড , টনসিল , প্লিহা ইত্যাদি অংশে এরা তৈরি হয়

। লিম্ফোসাইটগুলো বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কণিকা । মনোসাইট ছোট , ডিম্বাকার ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট বড় কণিকা । লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং এই অ্যান্টিবডির দ্বারা দেহে প্রবেশ করা রোগজীবাণু ধ্বংস করে । এভাবে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণুকে ধ্বংস কণিকা করে ।

 

( খ ) গ্রানুলোসাইট : এদের সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাযুক্ত । গ্রানুলোসাইট শ্বেত কণিকাগুলো নিউক্লিয়াসের আকৃতির ভিত্তিতে তিন প্রকার যথা : নিউট্রোফিল , ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল । নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে । ইওসিনোফিল ও বেসোফিল * হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে এলার্জি প্রতিরোধ করে । বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তকে রক্তবাহিকার ভিতরে জমাট বাঁধতে বাধা দেয় ।

পড়তে থাকুন, রক্ত কি

অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট:

অনুচক্রিকা| thrombocytes

Thrombocytes

ইংরেজিতে এদেরকে প্লেইটলেট ( Platelet ) বলে । এগুলো গোলাকার , ডিম্বাকার অথবা রড আকারের হতে পারে । এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে কোষ অঙ্গাণু- মাইটোকন্ড্রিয়া , গলিগ । বস্তু থাকে ; কিন্তু নিউক্লিয়াস থাকে না ।

অনেকের মতে , অণুচক্রিকাগুলো সম্পূর্ণ কোষ নয় ; এগুলো অস্থি মজ্জার বৃহদাকার কোষের ছিন্ন অংশ । অণুচক্রিকাগুলোর গড় আয়ু ৫-১০ দিন । পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ ।

অসুস্থ দেহে এদের সংখ্যা আরও বেশি হয় । অণুচক্রিকার প্রধান কাজ হলো রক্ত তঞ্চন করা বা জমাট বাঁধানোতে ( blood clotting ) সাহায্য করা । যখন কোনো রক্তবাহিকা বা কোনো টিস্যু ১৪১ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায় , তখন সেখানকার অণুচক্রিকাগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে অনিয়মিত আকার ধারণ করে এবং থ্রম্বোপ্লাসটিন ( Thromboplastin ) নামক পদার্থ তৈরি করে ।

এ পদার্থগুলো রক্তের প্রোটিন প্রোথ্রমবিনকে থ্রমবিনে পরিণত করে । থ্রমবিন পরবর্তী সময়ে রক্তরসের প্রোটিন- ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করে রক্তকে জমাট বাধায় কিংবা রক্তের তঞ্চন ঘটায় । ফাইব্রিন একধরনের অদ্রবণীয় প্রোটিন , যা দ্রুত সুতার মতো জালিকা প্রস্তুত করে ।

এটি ক্ষত স্থানে জমাট বাঁধে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে । তবে রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি আরও জটিল , এ প্রক্রিয়ায় জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ভিটামিন K ও ক্যালসিয়াম আয়ন জড়িত থাকে ।

রক্তে উপযুক্ত পরিমাণ অণুচক্রিকা না থাকলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না । ফলে অনেক সময় রোগীর প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে ।

রক্তের কাজ:

রক্ত দেহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এটি দেহের নানাবিধ কাজ করে , যেমন :

  •  অক্সিজেন পরিবহন : লোহিত রক্তকণিকা অক্সিহিমোগ্লোবিনরূপে কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে ।
  • কার্বন ডাই – অক্সাইড অপসারণ : রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোষগুলোতে যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় , রক্তরস সোডিয়াম বাই কার্বনেটরূপে তা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে এবং নিঃশ্বাস বায়ুর সাথে ফুসফুসের সাহায্যে দেহের বাইরে বের করে দেয় ।
  • খাদ্যসার পরিবহন : রক্তরস গ্লুকোজ , অ্যামাইনো এসিড , চর্বিকণা ইত্যাদি কোষে সরবরাহ করে ।
  • তাপের সমতা রক্ষা : দেহের মধ্যে অনবরত দহনক্রিয়া সম্পাদিত হচ্ছে । এতে করে বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন মাত্রার তাপ সৃষ্টি হয় এবং তা রক্তের মাধ্যমে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে । এভাবে দেহের সর্বত্র তাপের সমতা রক্ষা হয় ।
  • বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন : রক্ত দেহের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বহন করে এবং বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে সেসব ইউরিয়া , ইউরিক এসিড ও কার্বন ডাই – অক্সাইড হিসেবে নিষ্কাশন করে ।
  •  হরমোন পরিবহন : হরমোন নালিবিহীন গ্রন্থিতে তৈরি এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ বা রস । এই রস সরাসরি রক্তে মিশে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্গে সঞ্চালিত হয় এবং বিভিন্ন জৈবিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
  • রোগ প্রতিরোধ : কয়েক প্রকারের শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে । অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন উৎপাদনের মাধ্যমে রক্ত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
  • রক্ত জমাট বাঁধা : দেহের কোনো অংশ কেটে গেলে অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং দেহের রক্তক্ষরণ বন্ধ করে ।

ব্লাড গ্রুপ বা রক্তের গ্রুপ:

একজন আশঙ্কাজনক বা মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন , তার রক্তের গ্রুপ ‘ বি ’ পজিটিভ । আপনারা এ রকম বিজ্ঞাপন প্রায়শই টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পান । রক্তের গ্রুপ বা ব্লাড গ্রুপ কী ? কেনইবা ব্লাড গ্রুপ জানা প্রয়োজন ? অসংখ্য পরীক্ষা – নিরীক্ষা এবং গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে যে বিভিন্ন ব্যক্তির লোহিত রক্ত কণিকায় A এবং B নামক দুই ধরনের অ্যান্টিজেন ( antigens ) থাকে এবং রক্তরসে a ও b দুধরনের অ্যান্টিবডি ( antibody ) থাকে । এই অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে মানুষের রক্তকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা যায় । একে ব্লাড গ্রুপ বলে । বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার 1901 সালে মানুষের রক্তের শ্রেণিবিন্যাস করে তা A , B , AB এবং O— এ চারটি গ্রুপের নামকরণ করেন । সাধারণত একজন মানুষের রক্তের গ্রুপ আজীবন একই রকম থাকে । নিচের সারণিতে রক্তের গ্রুপের অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি দেখানো হলো :

আমরা উপরের সারণিতে রক্তে বিভিন্ন অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখেছি । এর ভিত্তিতে আমরা ব্লাড গ্রুপকে এভাবে বর্ণনা করতে পারি । যেমন :

গ্রুপ A : এ শ্রেণির রক্তে A অ্যান্টিজেন ও ৮ অ্যান্টিবডি থাকে ।

গ্রুপ B : এ শ্রেণির রক্তে B অ্যান্টিজেন ও a অ্যান্টিবডি থাকে । 1

গ্রুপ AB : এই শ্রেণির রক্তে A ও B অ্যান্টিজেন থাকে এবং কোনো অ্যান্টিবডি থাকে না ।

গ্রুপ O : এ শ্রেণির রক্তে কোনো অ্যান্টিজেন থাকে না কিন্তু a ও b অ্যান্টিবডি থাকে ।

দাতার লোহিত কণিকা বা কোষের কোষঝিল্লিতে উপস্থিত অ্যান্টিজেন যদি গ্রহীতার রক্তরসে উপস্থিত এমন অ্যান্টিবডির সংস্পর্শে আসে , যা উক্ত অ্যান্টিজেনের সাথে বিক্রিয়া করতে সক্ষম তাহলে , অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডি বিক্রিয়া হয়ে গ্রহীতা বা রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে । এজন্য সব গ্রুপের রক্ত সবাইকে দেওয়া যায় না । যেমন : তোমার রক্তের গ্রুপ যদি হয় A ( অর্থাৎ লোহিত কণিকার ঝিল্লিতে A অ্যান্টিজেন আছে ) এবং তোমার বন্ধুর রক্তের গ্রুপ যদি B হয় ( অর্থাৎ রক্তরসে a অ্যান্টিবডি আছে ) তাহলে তুমি তোমার বন্ধুকে রক্ত দিতে পারবে না । যদি দাও তাহলে তোমার A অ্যান্টিজেন তোমার বন্ধুর a অ্যান্টিবডির সাথে বিক্রিয়া করে বন্ধুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে । তাই দাতার রক্তে যে অ্যান্টিজেন থাকে তার সাথে মিলিয়ে এমনভাবে গ্রহীতা নির্বাচন করতে হয় যেন তার রক্তে দাতার অ্যান্টিজেনের সাথে সম্পর্কিত অ্যান্টিবডিটি না থাকে । এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কোন গ্রুপ কাকে রক্ত দিতে পারবে বা পারবে না , তার একটা ছক বানানো যায় ।

নিচের ছবিটি দেখলে আপনি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবেন। এখান থেকে আপনি বুঝতে পারবেন রক্তের দাতা এবং গ্রহীতা সম্পর্কে।

উপরের সারণিটি লক্ষ করলে দেখতে পারবে o গ্রুপের রক্তবিশিষ্ট ব্যক্তি সব গ্রুপের রক্তের ব্যক্তিকে রক্ত দিতে পারে । এদের বলা হয় সর্বজনীন রক্তদাতা ( universal donor ) ।

AB রক্তধারী ব্যক্তি যেকোনো ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করতে পারে । তাই তাকে সর্বজনীন রক্তগ্রহীতা ( universal recipient ) বলা হয় ।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে সর্বজনীন রক্তদাতা কিংবা সর্বজনীন রক্তগ্রহীতার ধারণা খুব একটা প্রযোজ্য নয় । কেননা , রক্তকে অ্যান্টিজেনের ভিত্তিতে শ্রেণিকরণ করার ক্ষেত্রে ABO পদ্ধতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও রক্তে আরও অসংখ্য অ্যান্টিজেন থাকে , যেগুলো ক্ষেত্রবিশেষে অসুবিধার কারণ হতে পারে । যেমন : রেসাস ( Rh ) ফ্যাক্টর , যা এক ধরনের অ্যান্টিজেন ।

কারো রক্তে এই ফ্যাক্টর উপস্থিত থাকলে তাকে বলে পজিটিভ আর না থাকলে বলে নেগেটিভ । এটি যদি না মেলে তাহলেও গ্রহীতা বা রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন ।

তাই ABO গ্রুপের পাশাপাশি রেসাস ফ্যাক্টরও পরীক্ষা করে মিলিয়ে দেখা চাই । অর্থাৎ রেসাস ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় নেওয়া হলে রক্তের গ্রুপগুলো হবে A + , A- , B + B , AB + , AB- , O + এবং O- ।

নেগেটিভ গ্রুপের রক্তে যেহেতু রেসাস ফ্যাক্টর অ্যান্টিডে নেই , তাই এটি পজিটিভ গ্রুপকে দেওয়া যাবে কিন্তু পজিটিভ গ্রুপের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপকে দেওয়া যাবে না ।

রক্তদান সম্পর্কিত কিছু কথা

আঘাত দুর্ঘটনা শল্যচিকিৎসা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে অত্যাধিক রক্তক্ষরণ হলে দেহে রক্তের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য ওই ব্যক্তিকে ইমিডিয়েটলি রক্ত প্রদান করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু সামাজিক প্রথার কারণে রক্ত দানে মানুষ উৎসাহী নয়।

আসলে রক্তদানের বৈজ্ঞানিক কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিংবা ব্যাড ইফেক্ট নেই। এর কোন ধরনের খারাপ প্রভাব নেই বরঞ্চ আপনি রক্তদান করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন।

মাঝে মাঝে অনেক বড় ধরনের দুর্ঘটনায় বেশ কিছু লোক আহত হয়ে পড়েন এবং তাদের রক্তক্ষরণ অনেক হওয়ার কারণে তাদের ইমিডিয়েটলি রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এ সময় যদি প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত না পাওয়া যায় তাহলে লোক গুলো মৃত্যুবরণ করবে।

এই ধরুন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার বিস্ফোরণের কারণে কতগুলো লোক মৃত্যুবরণ করল এবং সাথে শত শত লোক আহত হয়ে গেল, তাদের বাঁচানোর জন্য সর্বপ্রথম অস্ত্র ছিল রক্ত। যদি বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী দলগুলো এবং ইসলামী চিন্তা ধারার যুবকরা এগিয়ে না আসতো তবে এগুলো কে বাঁচানো সম্ভব হতো না।

আপনি হিন্দু হন কিংবা মুসলিম হন কিংবা অন্যান্য ধর্মের হন এটা কোন দেখার বিষয় না। সবার শরীরের ভিতরে রক্ত একই । শুধু গ্রুপ ভিত্তিক রক্ত কয়েক প্রকার।

রক্ত সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী

  • রক্ত কি

রক্ত একটি তরল যোজক টিস্যু যার রং লাল।

  • রক্ত কি নাপাক?

রক্ত কি নাপাক তরল। কারো শরীরে যদি রক্ত লেগে থাকে তাহলে তার ওযু হবে না। কিংবা অজু অবস্থায় যদি রক্ত বের হয় তাহলে ওই থাকবে না।

  • রক্ত কি কি উপাদান নিয়ে গঠিত?

রক্ত দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত। একটি আছে রক্ত রস আরেকটি হচ্ছে রক্তকণিকা।

  • রক্ত কেন জমাট বাঁধে?

রক্তে হিমোগ্লোবিন নামক এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ থাকে। এটি রক্তের রং লাল করে দেয়।

  • রক্ত কি ধরনের টিস্যু?

রক্ত এক ধরনের তরল যোজক টিস্যু।

আরো পড়ুন,

 

আমার শেষ কথা,

আশা করি আপনাদের বুঝাতে পেরেছি রক্ত কি? রক্তের কাজ কি ?রক্তের উপাদান কতটি ? ইত্যাদি সম্পর্কে। আমার উপরে তথ্য গুলো খুবই সাধারণ। আমি এর চেয়ে আরো বেশি কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম তবে সেগুলো আপনাদের জন্য বোঝা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যেতো।

আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। যদি এই পণ্যটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *