Skip to content

সুরা লাহাব এর পূর্ণ ব্যাখ্যা। বাংলা অনুবাদ, শানে নুযুল ও তাফসির।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু । আজকের আর্টিকেলে আমি সুরা লাহাব এর সম্পর্কে বিস্তারিত বলব। সূরা লাহাব বাংলা উচ্চারণ এবং সূরা লাহাব বাংলা অর্থ সহ বিশ্লেষণ করা হবে আজকের আর্টিকেলে। সুরা লাহাব কোরআন শরীফের খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটি সূরা।

 

সুরা লাহাব সম্পর্কে কিছু কথা

সূরা লাহাব কোরআন শরীফের ১১১ তম সূরা। এ আয়াত সংখ্যা পাঁচটি। এ আয়াত গুলো চমৎকার। সূরাটি কোরআন শরীফের ৩০ পারা অবস্থিত। আপনি যদি আধুনিক কোরআন শরীফে এ সূরাটিকে খুজতে যান তাহলে অবশ্যই ১১১ নম্বর অধ্যায়ে যাবেন।

কেননা আধুনিক কোরআন শরীফে একটি সূরাকে একটি অধ্যায় হিসেবে ধরা হয়। যেহেতু সূরাটি ১১১ নাম্বার সূরা তাই আধুনিক কোরানে এটি ১১১ নাম্বার অধ্যায়ে অবস্থিত। এ সূরাটিতে মাত্র একটি রুকু আছে। তবে সুরা লাহাব এ কোনো সিজদা নেই।

আরো কিছু তথ্য রয়েছে এ সূরা সম্পর্কে। যেমন, এই সূরার পূর্ববর্তী সূরার নাম সূরা নাস এবং সূরা লাহাব এর পরবর্তী সূরার নাম সূরা ইখলাস।অনেকেই এই সুরাকে প্রচলিত ভাষায় তাব্বাত ইয়াদা সূরা কিংবা সুরা তাব্বাত ইয়াদা বলে থাকে।

সূরা লাহাব এর আরবি

সুরা লাহাব

উচ্চারণ সূরা লাহাব এর বাংলা উচ্চারণ

বাংলা উচ্চারণ:

১।তাব্বাত ইয়াদা-আবি লাহাবিও ওয়া তাব্।

২।মানআগনা আনহু মা-লুহু ওয়ামা-কাসাব্ব্।

৩।সাইয়াছলা না-রন যা তা লাহাবিঁও।

৪।ওয়ামরা-আতুহু, হাম্মা-লাতাল হাত্বব।

৫।ফী জ্বীদিহা-হাবলুম মিম মাছাদ্।

 

সুরা লাহাবের বাংলা অনুবাদ,

বাংলা অনুবাদঃ

১।ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুটি হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।

২।তার ধন-সম্পদ আর সে যা উপার্জন করেছে তা তার কোনো কাজে আসলো না।

৩।অচিরেই সে শিখা বিশিষ্ট জাহান্নামের লেলিহান আগুনে প্রবেশ করবে।

৪।আর তার স্ত্রীও যে কাঠবহনকারিণী (যে কাঁটার সাহায্যে নবী (সাঃ) কে কষ্ট দিত এবং একজনের কথা অন্যজনকে বলে পারস্পরকে বিবাদের আগুনে জ্বালাত)।

৫।আর (দুনিয়াতে তার বহনকৃত কাঠ খড়ির পরিবর্তে জাহান্নামে) তার গলায় শক্ত পাকানো রশি বাধা থাকবে

অবশ্যই পড়ুন

 

সুরা লাহাবের নামকরণ।

 

আবু লাহাব ছিল ইসলামের ঘোর বিরোধী। সে শুধু ইসলামের ঘোর বিরোধী ছিলেন না সে ছিলো মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোর শত্রু। সে সবসময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টায় থাকতো। মহানবী (সাঃ) যখন কাউকে ঈমানের দাওয়াত প্রচার করত, তখন আবু লাহাব সেখানে গিয়ে তা মিথ্যা বলে প্রচার করত।

এবং বলত, মহানবী সাঃ একজন ভন্ড। আবু লাহাব দ্বীন ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শুধু আবু লাহাব নয় তার স্ত্রীও সহ আবু লাহাবের মতো ঘৃণিত কাজ করে বেড়াতো।

তার স্ত্রী মহানবী সাঃ এর পথে কাঁটা দিত যাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কষ্ট পায়।

আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জাহান্নামের ইঙ্গিত দেওয়ার জন্য এবং উম্মতে মুহাম্মদীকে বিশেষভাবে এ বিষয়ে সচেতন করার জন্য সুরা লাহাব নাযিল করেছেন। এটিই মূলত সূরা লাহাবের নাযিল হওয়ার কারণ।

আবু লাহাব লাহাবের কিছু তথ্য,

আবু ছিলো মহানবী সাঃ এর আপন চাচা। হজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিবের দশ জন পুত্র ছিলেন।

 

।হারিছ

২।যুবায়ের

৩।হাজাল

৪।যেরার

৫।মুকাওয়িম

৬।আবু লাহাব

৭।আব্বাস রা:

৮।হামজা রা:

৯।আবু তালিব

১০। আব্দুল্লাহ

এদের মধ্যে আব্দুল্লাহ রাসুল সাঃ এর পিতা ছিলেম এবং বাকি নয়জন তাঁর চাচা।হযরত আব্বাস রাঃ ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন।

আবু লাহাব এর আসল নাম ছিলো আব্দুল ওযযা। সে এই নামেই পরিচিত ছিলো । জন্মের সময় তার রক্তবর্ণ গাল ও সুন্দর মুখয়বয়ব দেখে তার বাবা তার নাম ডাকনাম দিয়েছিলেন আবু লাহাব বা (অগ্নিস্ফুলিঙ্গের পিতা) । তিনি মুহাম্মদ (সাঃ) আপন চাচা ছিলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মের পর থেকেই চাচা আবু লাহাবের প্রিয়পাত্র ছিলেন।সুরা লাহাব এ আবু লাহাব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলিষ্ঠ বাণী উচ্চারণ করেছেন। কোরআন পাকে আবু লাহাবের আসল নাম বর্জন করা হয়েছে। কেননা তার আসল নাম মুসরিক সুলভ। আর আবু লাহাবের নামের সাথেও জাহান্নামের বেশ মিল রয়েছে।

 

সুরা লাহাবের শানে নুযুল,

 

এ সূরা মক্কায় নাযিল হয়। বর্ণিত বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ এর বর্ণনানুসারে , রাসূলুল্লাহ ( স ) এর উপরে যখন অবতীর্ণ হয় তখন তিনি সাফা পর্বতের চূড়ায় তার আত্মীয় স্বজনদেরকে সমবেত করে। এবং তাদেরকে আল্লাহর ভয় প্রদর্শন করেন । প্রতিউত্তরে তার চাচা আবু লাহাব কটাক্ষ করলে সূরাটির সুত্রপাত হিসাবে প্রথম তিন আয়াত অবতীর্ণ হয় ।

 

আল্লাহ্ উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করলে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ) সাফা পর্বতে আরোহণ করে কোরাইশ গোত্রের উদ্দেশে ” আবদে মানাফ ” ও ” আবদুল মোত্তালিব ” ইত্যাদি নাম সহকারে ডাক দিলেন ।

এভাবে ডাক দেয়া তখন আরবে বিপদাশংকার লক্ষণ রূপে বিবেচিত হতো । ডাক শুনে কোরাইশ গোত্রের সবাই পর্বতের পাদদেশে একত্রিত হল ।

রাসূলুল্লাহ্ ( স ) বললেনঃ ” যদি আমি বলি যে , একটি শত্রুদল ক্রমশঃই এগিয়ে আসছে এবং সকাল বিকাল যেকোন সময় তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে , তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি ? ”

সবাই একবাক্যে বলে উঠলঃ ” হাঁ , অবশ্যই বিশ্বাস করব । ”কেনোনা রাসুল সাঃ ছিলেন পরম সত্যবাদী। তার কতগা সবাই বিশ্বাস করতো।

 

অতঃপর তিনি বললেনঃ ” আমি (শিরক ও কুফরের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত) এক ভীষণ আযাব সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছি । একথা শুনে আবু লাহাব তার প্রতি উত্তরে বললঃ ” ধ্বংস হও তুমি , এজন্যেই কি আমাদের সবাইকে একত্রিত করেছ ? ”

অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ ( স ) -কে পাথর মারতে উদ্যত হল । এর পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত সূরাটি আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেছেন।

সুরা লাহাবের তাফসির

এ পর্যন্তই আজকে। ফেসবুকে  ফলো করুন আমাকে 

আরও খেলুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *